ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং করে ঘরে বসেই উপার্জন করুন!

ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং করে ঘরে বসেই উপার্জন করুন!


বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে তরুণদের কাছে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ের একটি হচ্ছে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং। যদিও আমাদের দেশে এখনো এ বিষয়টি নতুন, কিন্তু এরই মধ্যে অনেকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন। পড়ালেখা শেষে বা পড়ালেখার সাথে সাথে ফ্রিল্যান্সিংয়ে গড়ে নিতে পারেন আপনার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার।
এ ক্ষেত্রে ইংরেজি জানা এবং আইটিতে কিছুটা দক্ষ লোকদের জন্য ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। আয়ের দিক থেকেও অনলাইন ফ্রিল্যান্সিংয়ে রয়েছে অভাবনীয় সম্ভাবনা। ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে মাল্টিবিলিয়ন ডলারের একটা বিশাল বাজার। উন্নত দেশগুলো কাজের মূল্য কমানোর জন্য আউটসোর্সিং করে থাকে। এখানে প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন কাজ আসছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তান সেই সুযোগকে ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছে। আমরাও যদি ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিশাল বাজারের সামান্য অংশ কাজে লাগাতে পারি তাহলে এটি হতে পারে আমাদের অর্থনীতি মজবুত করার শক্ত হাতিয়ার।

আউটসোর্সিং কী?

আউটসোর্সিং হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠানের কাজ, যা নিজেরা না করে তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির সাহায্যে করিয়ে নেয়া। এই কাজ হতে পারে পণ্যের ডিজাইন অথবা সম্পূর্ণ উৎপাদন কাজ সম্পন্ন করা। সাধারণত উৎপাদন খরচ কমানো এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার জন্যই আউটসোর্সিং করা হয়। একটি প্রতিষ্ঠানের কাজ নিজ দেশে সম্পন্ন না করে ভিন্ন দেশ থেকে করিয়ে আনাকে অফশোর আউটসোর্সিং বলা হয়। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে পণ্যের গুণগত মান ঠিক রেখে কম পারিশ্রমিকের মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন করা।


ফ্রিল্যান্সিং কী?

প্রতিষ্ঠানের সাথে দীর্ঘস্থায়ী চুক্তি ছাড়া স্বতন্ত্রভাবে কাজ করাকে ফ্রিল্যান্সিং বলা হয়। একজন ফ্রিল্যান্সারের এক দিকে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন কাজ নির্ধারণের সুযোগ, অন্য দিকে রয়েছে যখন ইচ্ছে তখন কাজ করার স্বাধীনতা। আপনার ব্যক্তিগত কাজকর্মের পর অবসর সময়ে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের করা যায়, যা গতানুগতিক অফিস সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ইন্টারনেটের সুবাদে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকেই ফ্রিল্যান্সিং করা যায়, কোনো নির্দিষ্ট স্থানের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। শুধু একটি কম্পিউটার আর একটি ইন্টারনেট সংযোগ তাহলে যেকোনো জায়গায় বসেই ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের কাজগুলো করা যায়।

ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস পরিচিতি

যেসব ওয়েবসাইটে আউটসোর্সিংয়ের কাজ পাওয়া যায় সেগুলোকে ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস বা বাজার বলা হয়। এ ক্ষেত্রে দুই ধরনের ব্যবহারকারী থাকে। যারা কাজ প্রদান করে তাদের বলা হয় ক্লায়েন্ট, বায়ার, ফ্রিল্যান্সার, প্রোভাইডার, সেলার বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোডার। একটি কাজের জন্য অসংখ্য কোডার ইরফ বা আবেদন করে এবং ওই কাজটি কত টাকায় সম্পন্ন করতে পারবে তা উল্লেখ করে। এদের মধ্য থেকে ক্লায়েন্ট যাকে ইচ্ছা তাকে নির্বাচন করতে পারে। সাধারণত পূর্বকাজের অভিজ্ঞতা, টাকার পরিমাণ এবং বিড করার সময় কোডারের মন্তব্য কোডার নির্বাচন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কোডার নির্বাচন করার পর ক্লায়েন্ট কাজের সম্পূর্ণ টাকা ওই সাইটগুলোতে জমা করে দেয়। এর মাধ্যমে কাজ শেষ হওয়ার পর সাথে সাথে টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে। পুরো সার্ভিসের জন্য কোডারকে কাজের একটা নির্দিষ্ট অংশ ওই সাইটকে ফি বা কমিশন হিসেবে দিতে হয়। এই পরিমাণ ওয়েবসাইট এবং সার্ভিস ভেদে ভিন্ন ভিন্ন (১০% থেকে ১৫%)।

কয়েকটি জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস

www.RentACoder.com
রেন্ট-এ-কোডার এ প্রায় দুই লক্ষ কোডার রেজিস্ট্রেশন করেছে। এই সাইটে প্রতিদিনই প্রায় আড়াই হাজারের বেশি কাজ পাওয়া যায়। সাইটের সার্ভিস চার্জ বা কমিশন হচ্ছে প্রতিটি কাজের মোট টাকার ১৫% যা কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর কোডারকে পরিশোধ করতে হয়। মূল ধারণা প্রতিটি সাইটের ক্ষেত্রেই প্রায় এক।
www.GetAFreelancer.com
 
এই সাইটে মোট কোডার বা প্রোভাইডারের সংখ্যা হচ্ছে প্রায় সাত লাখ। এই সাইটেও প্রায় ২৫০০-এর বেশি কাজ প্রতিদিন পাওয়া যায়। সাইটটির সার্ভিস চার্জ হচ্ছে প্রতিটি কাজের মোট টাকার ১০%। তবে গোল্ড মেম্বারদের জন্য কোনো সার্ভিস চার্জ নেই। গোল্ড মেম্বার হতে প্রতি মাসে আপনাকে মাত্র ১২ ডলার পরিশোধ করতে হবে। নতুন ইউজারদের জন্য এই সাইটে ট্রায়াল প্রজেক্ট নামে একটি বিশেষ ধরনের কাজ পাওয়া যায়, যাতে শুধু নতুন কোডাররাই বিড করতে পারবে। ফলে প্রথম কাজ পেতে আপনাকে বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না।
www.Joomlancers.com
 
এই সাইটে শুধু Joomla-এর কাজ পাওয়া যায়। Joomla হচ্ছে একটি ওপেনসোর্স কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। যারা Joomla-তে পারদর্শী তারা এই সাইটে বিড করে দেখতে পারেন। এখানে প্রায় ৫৫০০ ফ্রিল্যান্সার রেজিস্ট্রেশন করেছে আর প্রতিদিন প্রায় ১৫০টি কাজ পাওয়া যায়। এই সাইটে কমিশন হিসেবে প্রতিটি কাজের ১০% টাকা কোডারকে পরিশোধ করতে হবে। এই সাইটেও আপনি গোল্ড মেম্বার হতে পারবেন। গোল্ড মেম্বার হতে হলে আপনাকে প্রতি মাসে ৫০ ডলার প্রদান করতে হবে।
www.oDesk.com
 
এক সাইটের ফিচার ওপরে উল্লিখিত সাইটগুলো থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে প্রোভাইডারকে ঘণ্টা হিসেবে কাজের জন্য অর্থ প্রদান করা হয়। ক্লায়েন্ট আপনাকে সম্পূর্ণ প্রজেক্টের জন্য বা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য (কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের জন্য) নিয়োগ করতে পারে। রেজিস্ট্রেশন করার সময় প্রতি ঘণ্টায় আপনার কাজের মূল্য উল্লেখ করে দিতে হবে।
কাজ শেষে আপনি যত ঘণ্টা কাজ করেছেন ঠিক তত পরিমাণ টাকা ক্লায়েন্ট আপনাকে প্রদান করবে। কাজ করার মুহূর্তে আপনার ব্যয়কৃত সময় নির্ধারণ করার জন্য আপনাকে একটি সফ্টওয়্যার চালু রাখতে হবে, যা একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর আপনার ডেস্কটপের স্ক্রিসশট এবং অন্যান্য তথ্য ক্লায়েন্টের কাছে পাঠাবে। ফলে ওই সময় আপনি কাজ করছেন কি না ক্লায়েন্ট সহজেই নির্ধারণ করতে পারবে।
তবে অন্য সাইটগুলোর মতো এখানেও অনেক কাজ পাওয়া যায়, যেখানে সম্পূর্ণ প্রজেক্টের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয়। এই সাইটে প্রতি কাজের জন্য ১০% টাকা কমিশন হিসেবে প্রদান করতে হয়। যেহেতু বেশির ভাগ কাজ ঘণ্টা হিসেবে প্রদান করা হয়, তাই অন্য সাইটগুলোর তুলনায় এই সাইট থেকে অনেক বেশি পরিমাণে আয় করা সম্ভব। এ ছাড়াও কয়েকটি ওয়েবসাইট রয়েছে-

* www.ScriptLance.com
* www.ThemeForest.net
www.GraphicRiver.net
* www.ActiveDen.net
* www.bdtfreelancer.com

ইন্টারনেটে কাজের প্রকারভেদ

সফটওয়্যার প্রোগ্রামিং, ওয়েবসাইট প্রোগ্রামিং, ওয়েবসাইট ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, অ্যানিমেশন/ কার্টুন তৈরি, গেমস তৈরি, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, ওয়েবসাইট মার্কেটিং, ডাটা এন্ট্রি, লেখালেখি। এর যেকোনো এক বা একাধিক ক্ষেত্রে আপনি সফলভাবে নিজেকে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে তৈরি করে নিতে পারেন। তবে প্রথম দিকে আপনাকে একটু ধৈর্য্য এবং কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে হবে। বাংলাদেশী ব্যাংকিং সিস্টেমের নানা রকম জটিলতা, বিশেষ করে বাংলাদেশে ‘পেপল’-এর সেবা না থাকায় ফ্রিল্যান্সারদের নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়। এটা সত্য যে, প্রথম পাঁচটি প্রজেক্টের কাজ জমা দেয়ার পর থেকে আপনি সহজেই টাকা তুলতে পারবেন।

অর্থ উত্তোলনের মাধ্যমগুলো

* চেকের মাধ্যমে
* পেওনার (Payoneer) ডেবিট মাস্টারকার্ড
* মানিবুকার্স (Moneybookers)
* ব্যাংক থেকে ব্যাংকে ওয়্যার ট্রান্সফার (Wire Transfer)

Page Rank

Check Page Rank of your Web site pages instantly:

This page rank checking tool is powered by Page Rank Checker service